আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি; উপ¯ি’ত মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণ, ব্যাংকের ব্যব¯’াপনা পরিচালক ও অন্য কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, গণমাধ্যমের বন্ধুগণ ও সুধীবৃন্দ Ñ সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক শুভে”ছা। আর বিশেষভাবে শুভে”ছা ও অভিনন্দন জানাতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এ-টু-আই প্রকল্প’ এবং এ কাজে সহায়তা প্রদানকারী ইউডিসি’র সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে, যাদের সহায়তায় মধুমতি ব্যাংক আজ এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে যা”েছ।
বর্তমান সরকারের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উ”চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন ও ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ‘রূপকল্প’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ছয় বছরে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের ধারা অক্ষুণœ রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং, দারিদ্র্য লাঘব, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক নয়া ধারা চালু করেছে, যা দেশের আর্থিক খাতকে দিয়েছে এক মানবিক চেহারা। জনজীবনে আর্থিক সেবার আরো প্রসার ঘটানো অর্থনীতির জন্যে অপরিহার্য। এজন্যে আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে Ñ যার মাধ্যমে সমাজের নিম্নআয়ের মানুষদের আর্থিক সেবার আওতায় আনা সম্ভব হ”েছ। ব্যাংক শাখা খোলার জন্যে অর্ধেক শাখা পল্লী বা গ্রামে ¯’াপনের কৌশলগত নীতি গ্রহণ; কৃষক, গরিব ও অসহায়দের মাত্র দশ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ প্রদান, বর্গাচাষি ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদানের ব্যব¯’া করা হয়েছে। এরই মধ্যে কৃষি, এসএমই ও উৎপাদনমুখী পরিবেশবান্ধব খাতে অর্থায়ন সম্প্রসারিত হয়েছে। এসব অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং ও পরিবেশবান্ধব খাতে অর্থায়ন প্রসারে পুন:অর্থায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ও পেমেন্ট সিস্টেম অবকাঠামোর আমূল আধুনিকায়ন, পরিবেশ ঝুঁকি মূল্যায়ন গাইডলাইনস ও অন্যান্য নীতি সহায়তা দেয়া হয়েছে। ফলে কৃষি, ক্ষুদ্র, মাঝারি, নারী উদ্যোক্তা ও সবুজ ব্যাংকিংয়ের বিকাশ আজ সহজেই দৃশ্যমান। জনস্বার্থে মোবাইল ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং, সিএসআর, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রের মতো নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে Ñ যা ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের ব্যাংকিং ব্যব¯’াকে করা হয়েছে ডিজিটাইজড। মোবাইল ফোন ও স্মার্ট কার্ডভিত্তিক আর্থিক সেবা, ই-কমার্স ও ব্যয়সাশ্রয়ী আর্থিক সেবা যোগানের অন্যান্য কৌশল অবলম্বনের দ্রুত বিস্তারে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বত:স্ফূর্তভাবে উদ্যোগী হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশের আনাচে কানাচে কম খরচে ব্যাংকের অনুরূপ প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছাতে ২০১৩ এর ডিসেম্বরে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং’ গাইডলাইন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজেন্সি চুক্তিমালার আওতায় কোনো সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সীমিত আকারে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সূচনা। নীতিমালা মেনে যে কোনো ব্যাংক এখন এজেন্ট নিয়োগ করে বিভিন্ন সেবা দিতে পারে। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে মেট্রোপলিটন, সিটি কর্পোরেশন এবং ‘ক’ ও ‘খ ’শ্রেণিভুক্ত পৌরসভা এলাকায় একটি এজেন্ট নিয়োগ দিলে এর বাইরে দিতে হবে দুইটি। ব্যাংকগুলোর নিযুক্ত এজেন্টদের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে দৈনিক সর্বো”চ দুইবার ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ জমা বা উত্তোলন; ¯’ানীয় মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বিতরণ; ছোট ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায়; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ প্রদান; ইউটিলিটি বিল প্রদানে সহায়তা; ক্লিয়ারিং চেক গ্রহণ; হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড আবেদন ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা; বিমা প্রিমিয়াম সংগ্রহ ও বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত অন্যান্য কাজ করতে পারবে। তবে, তারা বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন, ঋণ আবেদন মূল্যায়ন ও অনুমোদন করতে পারবে না। মূল ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া তাৎক্ষণিক কোনো হিসাব খুলতে এবং কার্ড বা চেক ইস্যু করতে পারবে না। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণ ও লেনদেন নিরাপত্তার জন্যে বিশেষ কিছু নির্দেশনা রয়েছে। যেমন প্রতিটি এজেন্টকে ব্যাংকের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হবে, এজেন্ট পর্যায়ে যে কোনো অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সকল দায়-দায়িত্ব ব্যাংককে নিতে হবে। যে কোনো লেনদেনের সাথে সাথে এসএমএস এর মাধ্যমে গ্রাহককে অবহিত করতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আর্থিক সেবা দিতে সক্ষম, এমন শিক্ষিত ব্যক্তিরাও এজেন্ট হতে পারবেন। তবে, ‘ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি’ কে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমআরএ নিয়ন্ত্রিত এমএফআই, সমবায় সমিতি, পোস্ট অফিস, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির এজেন্ট, বিমা কোম্পানির শাখা, ওষুধের দোকানের, চেইন শপ, পেট্রল পাম্প, সিএনজি স্টেশন এবং ¯’ানীয় সরকারের অফিসগুলো এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবে। এরই মধ্যে আমরা ৫টি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন দিয়েছি, যার মধ্যে নতুন প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংক একটি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো নতুন একটি ধারণা চালু করায় মধুমতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চাই। একইসঙ্গে নিয়ম-নীতি মেনে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানা”িছ। মধুমতি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ‘এ-টু-আই প্রকল্প’ যুক্ত হওয়ায় পল্লী অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা প্রদানে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হলো বলে আমি মনে করি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক উদ্যোগের ফলে দেশের ভেতরে চাহিদা তৈরি হয়েছেÑ যা জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল রাখতে সহায়তা করছে। মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের ¯ি’তিশীলতাও বজায় রাখা সম্ভব হ”েছ। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। গরিবের আয় রোজগার বেড়েছে। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তাতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সমগ্র ব্যাংকিং খাতকে সাথে নিয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাবে। সবশেষে, আজকের অনুষ্ঠান আয়োজক মধুমতি ব্যাংককে ধন্যবাদ এবং ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস